NIN365 Desk, Kolkata : চিঠির ছত্রে ছত্রে সম্পর্ক মেরামতের আহ্বান। ফের ভারতীয়দের জন্য মালদ্বীপের উড়ান বুকিং শুরু করার অনুরোধ করল দ্বীপরাষ্ট্রের পর্যটন অ্যাসোসিয়েশন। মালদ্বীপের শাসক দলের নেতাদের ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এও বলা হয়েছে যে ওই মন্তব্য সাধারণ মালদ্বীপবাসীর মনোভাবের প্রতিফলন নয়। চিঠিতে উল্লেখ্য করা হয়েছে, মালদ্বীপের অর্থনীতির সঙ্গে পর্যটন শিল্প তথা ভারতীয় পর্যটকরা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। জানানো হয়েছে, মালদ্বীপের দুই তৃতীয়াশ জিডিপি পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। ৪৪ হাজার মালদ্বীপবাসী সরাসরি এই পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এই অবস্থায় ‘মাতাতো’র দাবি, ভারত-মালদ্বীপ সম্পর্ক ফের দৃঢ় হোক। আগের মতো স্বাভাবিক হোক পরিস্থিতি।
হাতে নয়, ভাতে মার পড়তেই চুপসে গেল মালদ্বীপের (Maldives) ভারত বিরোধিতা। নিজেদের দেশে ভারতীয় পর্যটকদের ফেরাতে মরিয়া মালদ্বীপ অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রাভেল এজেন্টস অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স বা ‘মাতাতো’ (MATATO)। তারা লম্বা চিঠি দল পর্যটন সংস্থা ইজি মাই ট্রিপের (Easy My Trip) সিইও নিশান্ত পিত্তিকে। সেখানে সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব ঝেরে ফেলে পর্যটক ফেরাতে কার্যত অনুনয় বিনয় করল ‘মাতাতো’।
ভারত থেকে পর্যটক যাওয়ার হার দ্রুত কমে যাওয়ায় চীনের শরণাপন্ন হলেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। চীন সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু সরাসরি সে দেশকে অনুরোধ করেছেন, যত বেশি সম্ভব তারা যেন মালদ্বীপে পর্যটক পাঠাতে উদ্যোগী হয়।
সমুদ্রসম্পদ ও জাহাজ নির্মাণ শিল্প থাকা সত্ত্বেও মালদ্বীপের অর্থনীতি প্রধানত পর্যটননির্ভর। দেশের মোট প্রবৃদ্ধির ২৮ শতাংশ পর্যটনের অবদান। দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার ৬০ শতাংশও আসে পর্যটনের দৌলতে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লাক্ষাদ্বীপ সফরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে হঠাৎ যে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজছে ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্র। আরও বেশি পর্যটক পাঠাতে চীনকে অনুরোধের কারণও তা।
প্রধানমন্ত্রী মোদির লাক্ষাদ্বীপ সফর ঘিরে মালদ্বীপের তিন মন্ত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব ‘অসম্মানজনক’ মন্তব্য করেছিলেন, মালদ্বীপ সরকার দ্রুত তা থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়েছে। সরকারের পক্ষে বলা হয়েছে, ওই অভিমত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নিজস্ব। মালদ্বীপ সরকারের সঙ্গে সম্পর্কহীন। তিন মন্ত্রীকে সরকার সাময়িক বরখাস্তও করেছে।
তবে মালদ্বীপের এসব উদ্যোগে ভারতীয়দের উষ্মা কমেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মালদ্বীপ বর্জনের যে ডাক দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে, তার জের কোথায় পৌঁছাবে, তা এখনো অজানা। ইতিমধ্যেই ভারত থেকে সে দেশের ১৪ হাজারেরও বেশি হোটেল বুকিং বাতিল হয়েছে। বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে বিমানের বুকিংও। মালদ্বীপের হোটেলভাড়া ২০ শতাংশ কমে গেছে।
মালদ্বীপের পর্যটন সংস্থাগুলো প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে। মন্ত্রীদের মন্তব্যের জন্য সে দেশের পর্যটন সংস্থাগুলোর সংগঠন নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে ও দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। তাদের আরজি, ব্যক্তিবিশেষের অপরাধের জন্য দেশকে যেন শাস্তি পেতে না হয়।
ভারত মহাসাগরে ১ হাজার ২০০টির মতো ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে মালদ্বীপ রাষ্ট্র গঠিত। এত দ্বীপের মধ্যে কমবেশি ২০০টিতে জনবসতি রয়েছে। জনসংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখ। অথচ বছরে পর্যটক আসেন তার বেশি। এই পর্যটকদের বড় একটা অংশ ভারতীয়। মালদ্বীপে ভারতীয় দূতাবাসের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে ভারত থেকে পর্যটক গেছেন ২ লাখ ৪১ হাজার, ২০২৩ সালে ২ লাখ। সাম্প্রতিক কালে ভারতীয় ধনী ও উচ্চবিত্তদের ছুটি কাটানোর খুবই পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে মালদ্বীপ। অবশ্যই তারা চায় না, ওই দ্বীপমালা রাষ্ট্র থেকে ভারতীয়রা চোখ ফিরিয়ে নিক।
প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু চীন সফরে গিয়ে সে দেশের প্রতি আরও বেশি পর্যটক পাঠানোর আরজি জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, কোভিডের আগপর্যন্ত তাঁর দেশে চীনের পর্যটকেরা সবচেয়ে বেশি আসতেন। তিনি চান, সেই জায়গা চীন ফিরে পাক। আরও বেশি করে পর্যটকেরা মালদ্বীপে আসুন। এই আহ্বানের মধ্য দিয়ে মুইজ্জু আরেকবার নতুন করে তাঁর চীননির্ভরতার প্রমাণ দিলেন। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কহানির এটাই প্রধান কারণ।
গত বছরের নভেম্বরে পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস নেতা মুইজ্জু মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি হারান মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টির ভারতপন্থী নেতা ইব্রাহিম মোহম্মদ সোলিকে। সোলি সরকারের নীতি ছিল ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’। মুইজ্জুর প্রধান নির্বাচনী স্লোগান ছিল ‘আউট ইন্ডিয়া’। অর্থাৎ, দেশকে ভারতের প্রভাবমুক্ত করা। সে জন্য জেতার পরেই তিনি সে দেশে অবস্থিত ৭৫ ভারতীয় সেনাকে ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দেন।
ওই সেনারা চুক্তি অনুযায়ী মালদ্বীপে রয়েছেন বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত ভারতের দেওয়া বিমান ও হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু রাখার জন্য। বিশেষত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা, উদ্ধারকাজ ও পণ্য সরবরাহের জন্য ওই পরিষেবা। সে দেশের সমুদ্র ও তার সম্পদের নানা গবেষণার জন্য দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল, চলতি বছরের জুনে তার মেয়াদ বৃদ্ধি না করার সিদ্ধান্তও নতুন প্রেসিডেন্ট নিয়েছেন। এতেই ভারত ভাবছে, মুইজ্জু চীনের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। ভারত চায় না, ভারত মহাসাগরে তার ঘরের কাছে এই দ্বীপমালায় চীন ঘাঁটি গাড়ুক।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে, প্রধানত মুইজ্জুর জন্যই দুই দেশের সম্পর্ক এই অস্বস্তিকর অবস্থায় পৌঁছেছে। তিনি তাঁর ভারত বিরোধিতায় লাগাম পরানোর কোনো চেষ্টাই করেননি। নভেম্বরে নির্বাচিত হওয়ার পর ভারত সফরে আসা নিয়ে ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপ কথা বলেছিল। সে দেশের প্রেসিডেন্টরা সব সময় সফরের প্রথম দেশ হিসেবে ভারতকে বেছে এসেছেন। কথা চলাকালে মুইজ্জু প্রথম সফরে যান তুরস্কে, যে দেশ ভারতের কাশ্মীরনীতি ও মানবাধিকার রক্ষার কড়া সমালোচক। এরপরই তিনি চলে যান চীন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, মুইজ্জুর সফর নিয়ে ভারত এখনই বিশেষ আগ্রহী নয়। তাড়াহুড়া করবে না।
মালদ্বীপের রাজনৈতিক মহলে ওই তিন মন্ত্রীর ‘অবমাননাকর’ মন্তব্য যথেষ্ট সমালোচিত হচ্ছে। সে দেশের রাজনীতিকদের একটা বড় অংশ ইতিমধ্যেই মনে করছেন, সরকারের উচিত ভারতের কাছে ক্ষমা চাওয়া। দুঃখ প্রকাশ করা।
মালদ্বীপে পার্লামেন্টের সাবেক ডেপুটি স্পিকার ইভা আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সরকার ওই মন্তব্য থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে, এটা গুরুত্বপূর্ণ। ওই মন্তব্য লজ্জাজনক, বর্ণবাদী, অসমর্থনীয়। আমাদের প্রয়োজনে ভারত সব সময় পাশে থেকেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, পর্যটন, অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে আমরা ভারতের ওপর নির্ভরশীল। আমার মনে হয়, সরকারের উচিত ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া।’
কী করবেন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু? ক্ষমা চাইবেন? দুঃখ প্রকাশ করবেন? বেইজিং তাঁকে কী বার্তা দেবে?
DISCLAIMER
Our news media denounces any form of bias and disapproves of sensationalism. The disseminated news is entirely educational and aimed at social awareness. Our media maintains absolute impartiality, adhering solely to the purpose of education and social consciousness.