Spread the love

NIN365 Desk, Kolkata :  মহানগরী কলকাতা উস্তাদের প্রিয় শহর। বাংলাই ছিল তাঁর প্রাণ। তাই তো দেশ-বিদেশ ঘুরেও বাংলাকেই আঁকড়ে ধরে রাখতেন উস্তাদ রাশিদ খান। তাই বাংলার প্রিয় শিল্পীর প্রয়াণে গতকাল থেকেই এ শহর থমথমে। বুধবার রবীন্দ্রসদনে শিল্পীকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে এসে, অনুরাগীরা তাই চোখের জলে ভাসল। গান স্যালুটেই শিল্পীর প্রিয় শহর বিদায় জানাল শিল্পীকে। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সঙ্গীতমহলের বিশিষ্টরা। 

প্রয়াত রশিদ খান। ভারতের সঙ্গীত জগতের অমূল্য রত্ন রশিদ খান। মাত্র ৫৫ বয়সেই থেমে গেল তাঁর জীবন প্রদীপ। যিনি এক নিঃশ্বাসে গেয়ে দিতে পারতেন, আজ তিনিই চিরঘুমের দেশে। গতকাল দুপুর ৩:৪৫ মিনিট নাগাদ পিয়ারলেস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন দেশের অন্যতম শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী উস্তাদ রশিদ খান। গতকালই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পিয়ারলেস হাসপাতালে দাঁড়িয়ে রশিদ খানের মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেছেন। এবং জানিয়েছিলেন আজ দুপুর ১ টা নাগাদ তাঁর মরদেহ রবীন্দ্রসদনে আনা হবে এবং গান স্যালুটে বিদায় জানানো হবে। তাঁর কথামতো তাই হল, দুপুর ১ টা নাগাদ রশিদ খানকে গান স্যালুটে বিদায় জানানো হল। আজ তাঁকে দেখতে রবীন্দ্রসদনে অগণিত ভক্তদের ভিড় জমেছিল। তাঁকে শেষ বিদায় জানাতে রবীন্দ্র সদনে এসেছিলেন বাংলার একাধিক সঙ্গীতশিল্পীরা, যেমন, হৈমন্তী শুক্লা, ঊষা উত্থূপ-সহ একাধিক শিল্পীরা।

(রবীন্দ্রসদনে শেষ যাত্রায় ‘প্রয়াত উস্তাদ রশিদ খান’ : পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তার স্ত্রী, উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ছবি : সংগৃহীত

আজ সকাল ৯ টা নাগাদ নাকতলার বাড়ি থেকেই শিল্পীর মরদেহ বের করা হয়। এরপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় রবীন্দ্রসদন। সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন-সহ রশিদ খানের পরিবারের লোকেরা। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে গান স্যালুটে বিদায় জানানো হল, রশিদ খানকে। এরপর বাড়িতে ধর্মীয় মতে তাঁর আচার অনুষ্ঠান করা হবে। সাড়ে তিনটার সময় জানাজা হবে। এরপর তাঁর মরদেহ উত্তরপ্রদেশে তাঁর পৈতৃক ভিটেতে নিয়ে যাওয়া হবে। ওখানেই কবর দেওয়া হবে রশিদ খানকে। উস্তাদ রশিদ খানের মৃত্যুতে গুলাম আলি খান একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘রশিদ খান শুধু ভারতেরই নয়, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শাস্ত্রীয় শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রশিদ খান। তিনি আমার ভ্রাতৃসম। তিনি চলে গেলেন কিন্তু রেখে গেলেন একাধিক স্মৃতি। দেখা হলেই আমরা খুব গল্প করতাম।’

একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লা বলেছেন, রশিদের সঙ্গে তাঁর শুধু গানের সম্পর্ক নয়, পারিবারিক সম্পর্কও। প্রতি বছর ভাইফোঁটা নিতেন তিনি তাঁর কাছ থেকে। তাঁকে বুড়ি বলে ডাকার একমাত্র মানুষ ছিলেন রশিদ খান। তিনি বাংলা ভাষাটা খুব ভালোবাসতেন। বলিউডের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী আদনান সামি প্রয়াত গায়কের ছবি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করে লিখেছেন, “আমি এই খবরটি বিশ্বাস করতে পারছি না! আমি খুবই মর্মাহত এবং বাকরুদ্ধ। কী বিশাল ক্ষতি!! একজন প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পী এবং একজন সুন্দর বন্ধু। আমার গভীরতম তার প্রিয় পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাকে জান্নাতুল ফিরদৌস দান করুন। আমিন।”

গায়িকা হারশিপ কৌর বলেছেন, “অত্যন্ত দুঃখের খবর। উস্তাদ রশিদ খান জি চলে গেলেন। সঙ্গীত জগতের জন্য এটা এক বিরাট ক্ষতি। সঙ্গীতে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য তিনি চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন এবং তাঁর কণ্ঠ চিরকাল আমাদের হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হবে।” অভিনেতা বাঙালি অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “আমরা একটি রত্ন হারিয়েছি। উস্তাদ রশিদ খানের পরিবার এবং শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। সর্বদা জাদুকরী সঙ্গীতের স্মৃতি সংরক্ষণ থাকবে৷”

উত্তরপ্রদেশে বদায়ুঁতে জন্ম উস্তাদ রাশিদ খানের। তাই জন্মভিটেতেই সমাধিস্থ করা হবে তাঁকে। সেই কারণেই বুধবারই শিল্পীর শবদেহকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে উত্তরপ্রদেশের বদায়ুঁতে।

রাশিদ খানের ঘরানা ছিল রামপুর-সাসওয়ান। যে ঘরানার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাশিদেরই পূর্বজ ইনায়েত হুসেন খাঁ-সাহিব। রাশিদ তালিম নিয়েছেন এই ঘরানারই আর এক দিকপাল উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ-সাহিবের কাছ থেকে। যিনি ছিলেন আবার রাশিদের দাদু। রাশিদের মামা গোয়ালিয়র ঘরানার উস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খাঁ-সাহেবের থেকেও তালিম পেয়েছেন রাশিদ। পরবর্তীকালে তরুণ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে ভারত জোড়া নাম। তাঁর জাদুকণ্ঠের ছোঁয়া পায় বলিউডের সিনেমার গানও। তথাপি তিনি বাংলার। বাঙালিরই উস্তাদ গর্ব। কেন? কীভাবে?

ছোটবেলায় যার গানে বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না, সেই ছেলেই ১১ বছর বয়সে প্রথম সঙ্গীতানুষ্ঠান করেন। ভোরের সূর্য বলে দিয়েছিল দিনটা কেমন যাবে। কয়েক বছর পরে যুবক রাশিদ খানকে বিরাট ‘সার্টিফিকেট’ দিয়েছিলেন পণ্ডিত ভীমসেন যোশী। গান শুনে মন্তব্য করেন- “ভারতীয় কণ্ঠ সঙ্গীতের ভবিষ্যত উজ্জ্বল।” উল্লেখ্য, যে দুই শিল্পীর ওস্তাদি গায়ন অনুপ্রাণিত করেছিল রাশিদ খানের সঙ্গীত জীবনকে, তাঁদের অন্যতম ভীমসেন যোশী। দ্বিতীয় মানুষটির সঙ্গে আবার বাংলার গভীর যোগ, তিনি উস্তাদ আমির খান।শহর কলকাতা ছিল যাঁর সাধনস্থল।

Spread the love

DISCLAIMER

Our news media denounces any form of bias and disapproves of sensationalism. The disseminated news is entirely educational and aimed at social awareness. Our media maintains absolute impartiality, adhering solely to the purpose of education and social consciousness.

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version